নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের গোয়াইনঘাটের ৪নং ল্যাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সতী গ্রামের মৃত নিছার আলীর ছেলে হাড়ি পাতিল ফেরিওয়ালা ইছরাখ আলী ওরফে কালা মিয়া'(৫৫) কে চোরাকারবারি সাজিয়ে মিথ্যে মামলায় গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
সরজমিন তদন্ত করে দেখা যায়- হতদরিদ্র ও সহজ সরল কালা মিয়া একজন গ্রাম্য ফেরিওয়ালা হাড়ি পাতিল ব্যবসায়ী।
গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সাথে এ প্রতিনিধির আলাপকালে তারা জানান দরিদ্র কালা মিয়া প্রায় দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে গ্রামে নতুন ও পুরনো হাড়ি-পাতিল সরবরাহ ও ক্রয়বিক্রয় করে সততার সাথে জীবীকা নির্বাহ করে আসছেন। তিনি কোন অসামাজিক কার্যকলাপে বা চোরাকারবারির মতো কাজে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না! তাই খোদ ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানও হাড়ি পাতিল ব্যবসায়ী এবং অসামাজিক কার্যাকালাপ বা অবৈধ ব্যবসায় যুক্ত নয় বলে কালা মিয়ার প্রত্যায়নপত্র ইস্যু করেছেন।
সম্প্রতি গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ হঠাৎ করে (গত অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে এস আই মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বাদি হয়ে দায়েরকৃত মামলা নং-১৫/২৫৫)একটি পুরনো চোরাচালান মামলায় এজহারে নাম না থাকা সত্বেও এজহার বহির্ভূত আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে চালান করে জেল হাজতে প্রেরণ করার অভিযোগ ওঠেছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই কামাল এর বিরুদ্ধে।
খোজ নিয়ে যানা যায় এই মামলায় যে ০৪ জন আসামির নামে এজহার হয়েছে তাদের বাড়ি গোয়াইনঘাট উপজেলার ২ নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত এবং ওরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমনকি অবৈধ চোরাকারবারি ব্যবসাও অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান চালাতেও শুনা যায়নি!
অথচ মামলার আসামি তালিকায় নাম নেই এবং অতীতের কোন ক্রাইম রেকর্ডও নেই এমন একজন হাড়ি পাতিল ব্যবসায়ী কেন হঠাৎ করে গরু চোরাকারবারি হতে যাবেন এমন প্রশ্ন পরিবার ও এলাকাবাসীর।
শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ৪ টি গরু চোরাচালান মামলার আসামি সবাই সতী গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দা।
গ্রেফতারকৃত কালা মিয়ার ছেলে মেয়ে সহ পাড়া-প্রতিবেশি কেউ চেনেন না তাদের।
তেমনি একদল চোরাকারবারিদের মামলায় অজ্ঞাত আসামির সুযোগ নিয়ে এজহার বহির্ভূত একজন নিরীহ বৃদ্ধ গ্রাম্য ফেরিওয়ালা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান দিয়ে আবার থানা পুলিশের ফোর্স বার বার কেন আসছেন কালা মিয়ার বাড়িতে এমন প্রশ্ন’র উত্তর না পেয়ে হতবাক পরিবার ও এলাকাবাসী।
প্রশ্ন ওঠেছে নৈপথ্যের কারণ কি? পুলিশ অতিউৎসাহী হয়ে কেন কার ইশারায় একজন নিরীহ ক্ষুদ্র গ্রাম্য ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে নির্যাতন ও কোর্টে প্রেরণ করলো?
এব্যাপারে গ্রেফতারকৃত কালা মিয়ার প্রবাস ফেরত মেয়ে রুনা আক্তার রুমি বলেন – আমার আব্বু সারাদিন ফেরি করে মালামাল বিক্রি করে বাড়িতে এসে গত মঙ্গলবার (০৬ নভেম্বর ২০২৩) আলী গ্রাম দক্ষিণ মসজিদে এশার নামায পড়ে বাহির হলে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।আমার আব্বুর উপর পূর্বে কোন ধরনের মামলা নেই।
আকস্মিক ঘটনায় আমরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ি, থানায় গিয়ে দেখা করে জানতে পারি পুরাতন একটা চোরাকারবারি মামলায় আব্বু কে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ এবং থানায় নিয়ে মারপিট করেছে পরে আমি ফার্মেসি থেকে ঔষধ কিনে দিয়েছি।
কান্না জড়িত কণ্ঠে রুমি বলেন – আমর আব্বু হতদরিদ্র বিগত একযোগ ধরে গ্রামে ফেরি করে হাড়ি পাতিল ব্যবসা করে আসছেন, সম্প্রতি মহাজনের দোকান থেকে ১,৩০,০০০/- (এক লক্ষ ত্রিশ হাজার) টাকার মাল ক্রয় করে মাত্র কিছু মাল ফেরি করেছেন, বাকি মালামাল এখনো ঘরে বিদ্যমান রয়েছে।
আমি পুলিশের মিথ্যে মামলা থেকে আমার বাবার নাম কর্তন ও জুলুম নির্যাতন এর সঠিক বিচার চাই।
আমাদেরকে পুলিশ মানসিকভাবে নির্যাতন করছে এবং হুমকি দিচ্ছে আমার ক্রয়কৃত গরু বাছুর নিয়ে যাবে এবং আমাদের দেখে নিবে।
আমার আব্বুকে গ্রেফতারের পরও পুলিশ আমাদের বাড়িতে হানা দেওয়ায় আমারা আতংকিত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
আমি প্রবাসী ও বিবাহিত মেয়ে, আমার ভাইয়ের সাথে বাবার বনিবনা না হওয়ায় আমি বাবাকে দেখাশোনা করছি এবং ব্যবসায় সহযোগিতা করছি।
হঠাৎ করে কেন আমাদের উপর পুলিশ ক্ষেপেছে ও জুলুম নির্যাতন শুরু করেছে তা আমাদের বুঝে আসছে না।
কালা মিয়ার পুত্রবধু সেলিনা (২০) বলেন – আমার শশুর নিরপরাধ, তিনি অতীতেও কোন চোরাকারবারি ব্যবসায় ছিলেন না, নিজে ফেরী ব্যবসা করে সৎভাবে অর্থ উপার্জন করে জীবন যাপন করেন।
উনাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর পরেও পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি প্রধান করছে, আমার স্বামী কামরুলকে খুজে বের করে দিতে বলছে, আমার তিন বছর বয়সী শিশু সন্তানকে জোর পূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ারও হুমকি প্রদান করছে।
কালা মিয়ার স্ত্রী জিলেখা বেগম জানান, আমার নির্দোষ স্বামীকে এমন অন্যায়ভাবে মিথ্যে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোয় আমরা মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছি। আমার স্বামীর নিত্য রোজগারে দু-মুঠো ডাল ভাত খেয়ে আমাদের জীবন চলে, স্বামী জেলে থাকায় এখন আমরা না খেয়ে থাকার মত পরিস্থিতে আছি, আমরা দ্রুত এর সঠিক বিচার চাই এবং আমার স্বামীকে মুক্ত চাই।
কালা মিয়ার প্রতিবেশি সৌদি ফেরত প্রবাসী আলাউদ্দিন একই গ্রামের হারিছ আলি, মোস্তফা, সেলিম, জালাল উদ্দিন সহ অনেকেই জানান পাশা-পাশি বাড়ি এবং প্রতিবেশি হওয়ায় দীর্ঘকাল থেকে আমরা কালা মিয়া’কে দেখে আসছি, উনি একজন সহজ সরল মানুষ, গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফেরী করে বাসন বিক্রি করে দিনানিপাত করেন। উনি কখনোই কোন চোরাকারবারি ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন বা আছেন বলে আমাদের জানা নেই, উনাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
এব্যাপারে বক্তব্য নিতে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকার কয়েকজন সাংবাদিক গোয়াইনঘাট থানায় গেলে ডিউটি অফিসার ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি,অনেক্ষণ অপেক্ষা করে বক্তব্যের জন্য কাউকে না পেয়ে চলে আসার পর থেকে কয়েক দিন ধারাবাহিক ভাবে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তার নাম্বারে কল ও টেক্স ম্যাসেজ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি! মাঝেমধ্যে এএসআই পর্যায়ের কর্মকর্তা ফোন রিসিভ করে স্যার মিটিংয়ে আছেন পরে কল দিবেন বলে ফোন রেখে দেন বিধায় থানার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বি:দ্র: ফলোআপ আসছে —
Leave a Reply