স্টাফ রিপোর্টার: নড়াইলে পিঠা উৎসব ও সারাদেশের সাংবাদিকদের মিলন মেলা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উপর হামলা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে কঠিন কর্মসূচির হুশিয়ারী দিয়েছেন বিএসএসএস নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি (বিএমএসএস) -এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান খন্দকার আছিফুর রহমানের আয়োজনে গত ৪ ফেব্রুয়ারী শনিবার বিকাল ৪টায় নড়াইলের মির্জাপুরে আলোচনা সভা, জমকালো পিঠা উৎসব ও সাংবাদিকদের মিলন মেলা ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়।
এ উৎসবে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রায় ২শ’ সাংবাদিক অংশগ্রহন করেন।
বিএমএসএস’র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান খন্দকার আছিফুর রহমানের সঞ্চালনায় সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নড়াইল সদর পৌর মেয়র ও নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঞ্জুমান আরা।
শুভ উদ্বোধক হিসেবে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ১২নং বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের সুযোগ্য চেয়ারম্যান সাংবাদিক বান্ধব ব্যক্তিত্ব, আধুনিক বিছালী ইউনিয়নের উন্নয়নের রূপকার মোঃ হিমায়েত হুসাইন ফারুক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আমিনুর রহমান, মহাসচিব মোঃ সুমন সরদার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আবু হামজা বাঁধন, যুগ্ম মহাসচিব মাসুদ হোসেন খান, যুগ্ম মহাসচিব নূর আলমগীর অনু, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন মাহমুদ, খানজাহান আলী থানা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোশারফ হোসেন মোড়ল ও সাধারন সম্পাদক শেখ আসলাম হোসেন এবং শিংগাশোলপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখ।
অতিথি হিসেবে ছিলেন ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য খন্দকার মঈন উদ্দীন, প্রভাষক আকিদুল ইসলাম, সৈয়দ রিয়াজ আলী মীর, নড়াইল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাথী তালুকদার, খন্দকার আনিসুর রহমান, তরিকুল ইসলাম টলার, মির্জা গালিব উজ্জ্বল, মো: জামির, মো: সেলিম আহমেদ, মো: রমজান, লোহাগড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি ওবায়দুর রহমান, চ্যানেল ২৪ -এর নড়াইল জেলা প্রতিনিধি মো: সাজ্জাদ, সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার আশিকুর রহমান টনি, সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আহমেদ, যশোর জেলা সভাপতি নাসিম রেজা, সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, মামুন মোল্যা, সুমন চক্রবর্তী প্রমূখ।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রায় ২শ’ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। এসময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা নড়াইলের সাংবাদিক মো: রফিকুল ইসলাম, বাঘারপাড়ার আমের আলীসহ হামলা-মামলার শিকার সহযোদ্ধাদের ফুলের মালা পরিয়ে সন্মাননা জানান বিএমএসএস ঐক্যবদ্ধ পরিবার।
পিঠা ও উৎসবের আলোচনা সভার শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন সাংবাদিক জাফর শিকদার। তারপর সকলের কন্ঠে জাতীয় সংগীত, ভাষা আন্দোলনে ও মহাণ মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের এবং সারাদেশের নিহত সাংবাদিকদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর অনুষ্ঠানের সভাপতি, প্রধান অতিথিসহ সকল অতিথিদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করা হয়।
এছাড়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক নারী সহযোদ্ধা সুমি খানের সম্পাদনায় “নারীকন্ঠ” পত্রিকার লোগো উন্মোচনের মাধ্যমে শুভ উদ্বোধন করা হয়। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য সহ পিঠা উৎসবের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন আধুনিক ১২নং বিছালী ইউপি চেয়ারম্যান হিমায়েত হুসাইন ফারুক। বক্তব্যের শুরুতেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ সহ বিছালী ইউনিয়নের কৃতি সন্তান উল্লেখ করে বিএমএসএস’এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান খন্দকার আছিফুর রহমানকে এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
এছাড়া আগামী ২০২৪ সালের পিঠা উৎসব তার পরিষদের সামনে তারই অংশগ্রহনের মাধ্যমে আয়োজনের অনুরোধ জানান। তার স্থান থেকে সংগঠনকে এবং সাংবাদিকদের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগীতারও আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি ভালোবাসা জড়ানো বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিকদের প্রতি আমি খুবই শ্রদ্ধাশীল। আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারলে চেয়ারম্যান হিসেবে আমি অসম্পূর্ণ থেকে যেতাম। অগ্নিঝরা বক্তব্যে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা দেশের মানুষের মূখপত্র, সমাজের দর্পণ-জাতির বিবেক আর সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের প্রতিনিধি।
আপনারা সবসময় সমাজের অবহেলিত, অধিকার বঞ্চিত মানুষের কল্যানে কাজ করেন আর দুর্নীতিবাজ, ভুমিদস্যুসহ সকল অনিয়ম তুলে ধরে সরকার ও প্রশাসনের নজরে নিয়ে আসেন।
আপনারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করবেন, আপনাদের কলমের লিখনি অনেক মূল্যবান। কলম ধরতে গিয়ে কারো না কারো পক্ষে বিপক্ষে গেলেই তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে এবং সাংবাদিকরা তখন খারাপ ঘুষখোর, চাঁদাবাজ হয়ে যায়।
সাংবাদিক রফিকুল ইসলামসহ ৩ সাংবাদিকের উপর হামলা ও মিথ্যা মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবী জানান। এব্যাপারে নড়াইলের পুলিশ সুপার ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন এবং জরুরী হস্তক্ষেপ দাবী করেন তিনি।
নড়াইল সদর পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঞ্জুমান আরা প্রধান অতিথির বক্তব্যে অনুষ্ঠানের আয়োজক সহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সংগঠনের সাংবাদিকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, শত শত সাংবাদিকদের এমন মিলন মেলা ও পিঠা উৎসব দেখে আমি খুবই আনন্দিত ও গর্বিত। আমি এই বিছালী ইউনিয়নের মেয়ে এবং দক্ষিণ বঙ্গের প্রথম নারী মেয়র। হাসিভরা মুখে তিনি বলেন, সত্য কথা বলতে কি, আমি সাংবাদিকদের দেখলে ভয়ও পাই আবার সাহসও পাই। সাংবাদিকরা সরকারের উন্নয়নের পাশে থেকে শক্তি যোগায়। দেশের অনিয়ম দূর্নীতি তুলে ধরে।
এখনো দেশের ৯০ শতাংশ সাহসী সাংবাদিক সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে। সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম আমার পরিচিত, তাকে আমি চিনি। তার সাথে যেটা ঘটেছে এটা কষ্টদায়ক। সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে কঠিন বিচার করা হবে। তিনি সংগঠন ও সাংবাদিকদের আশ্বাস প্রদান করে বলেন, আমি মাননীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়কে বলবো এই বিষয়টা দেখতে।
একটি গাড়ির দুইটি চাকা উল্লেখ করে নারী নেতৃত্ব ও সকল নারীদের অগ্রযাত্রায় বিএমএসএস সাথে নারীদের রাখায় তিনি সংগঠনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নারীকন্ঠ পত্রিকাটির অগ্রযাত্রাকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে সমাপনি বক্তব্যে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটির কেন্দ্রীয় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক বলেন, সাংবাদিক রফিকুল ইসলামসহ নড়াইলের ৩ জন সাংবাদিকের উপরে পরিকল্পিত ভাবে হামলা করেছে এবং ভূয়া মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা করেছে।
সাংবাদিকদের সাথে এমন জঘন্য আর ঘৃণিত কাজ করা জঘন্য অপরাধ। সাংবাদিকরা সত্য তুলে ধরে এটাই সাংবাদিকদের অপরাধ। তিনি বলেন, কত বড় সাহস ওই ভন্ড সর্বরোগের ভূয়া চিকিৎসকের। যে, সাংবাদিকদের মাইকে ডাকাত ঘোষণা করে গায়ে হাত তোলে ও মিথ্যা সাঁজানো চাঁদাবিজি মামলা দায়ের করে এবং পুলিশ প্রশাসন তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিকদের নামে মামলা নিয়ে তাদের জেল হাজতে পাঠায়।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ জনগন মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে অভিযোগ নেন, তদন্ত করে মামলা নেন, তদন্ত না করে মামলা রেকর্ড করেন না। আর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ পেয়ে তদন্ত ছাড়াই মামলা হয়ে যায়, বাহ্ কি চমৎকার।
হুশিয়ারী উচ্চারণ করে প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, সাংবাদিকদের ক্ষেপাবেন না। দ্রুত সময়ের মধ্যে সাংবাদিকদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করলে এবং সাংবাদিকদের উপরে হামলার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে না করলে কঠিন কর্মসূচির ঘোষণা দিতে বাধ্য হবো।
নড়াইল জেলা প্রশাসন গভীর ঘুমে উল্লেখ করে এবিষয়ে শীঘ্রই ব্যবস্থা না নিলে কাফনের কাপড় পরে সারাদেশের সাংবাদিকরা নড়াইলে অবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা করবে বলেও হুশিয়ারী দেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান খন্দকার আছিফুর রহমান।
সবশেষে আনন্দঘন পরিবেশে বাড়িতে তৈরি পিঠা পরিবেশন করা হয়। এবং পিঠা উৎসব সফল করতে সহযোগীতায় নিজ সহধর্মিনী শিরীন রহমান সহ উপস্থিত সকলকে সংগঠনের সহযোদ্ধা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে ফুল দিয়ে বরণ সহ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান খন্দকার আছিফুর রহমান। পিঠা উৎসবের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও সহযোগীতায় ছিলেন-সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক রহিমা খানম সুমি, বিশারত হোসেন রাজা, মিল্টন শেখ, রাসেল হুসাইন, মিনারুজ্জামান মিরন, জাফর শিকদার, সৈয়দ রমজান, মো: রাসেল আহমেদ, মাহমুদুল হাসান নিপুন, শেখ লাবিব প্রমূখ।
Leave a Reply