বানভাসিদের ত্রাণ দিল বিভিন্ন সংগঠন। সিলেটে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় জেলাজুড়ে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কয়েক দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় লোকজন রয়েছেন চরম খাদ্য সংকটে। বিভিন্ন স্থানে সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করলেও অনেকের ভাগ্যে জুটেনি এক মুঠো চাল।
উল্টো কোম্পানীগঞ্জে সরকারি ত্রাণ আনতে গিয়ে পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হতে হয়েছে তাদের। এ অবস্থায় বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন। সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন প্রবাসীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি। তাদের উদ্যোগে সিলেট শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় বিতরণ করা হচ্ছে ত্রাণ।
এর মধ্যে রোববার সিলেট জেলা বিএনপির উদ্যোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর, পশ্চিম ইসলামপুর, উত্তর রণিখাইসহ ৬টি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে খাদ্য সামগ্রী বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি হাজী শাহাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর, জেলা বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদ মামুন, কামরুল হাসান শাহীন, নুরুল মুত্তাকিন বাদশাসহ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিট কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের ৫০০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও ১০০ পরিবারের মধ্যে হাইজিন কিটস বিতরণ করে।
সিলেট ইউনিটের সেক্রেটারি মো. আব্দুর রহমান জামিলের নেতৃত্বে খাবার বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন- তেলিখাল ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান, ইউনিটের কার্যকরী সদস্য সোয়েব আহমেদ, যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্য বদরুল আযাদ শুভ, ফয়জুন্নেছা রুমানা, ইমাজ উদ্দিন, নাবিদ, সানি। এছাড়াও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে ২০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করে। নগরীর মেন্দিবাগ উপশহর তেররতন, মিরাবাজার নয়াপাড়া, সোবহানীঘাট ও ঘাসিটুলা এলাকায় এ পানি বিতরণ করা হয়।
এদিকে নগরীর মাছিমপুরে বন্যার্তদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার ও জরুরি ওষুধ বিতরণ করে সিলেট মহানগর ছাত্র মজলিস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ মনির হোসাইন, সিলেট মহানগর সভাপতি সাইফুল ইসলাম জলিল, সেক্রেটারি লিটন আহমদ জুম্মান, ছাত্র মজলিস সিলেট পূর্ব জেলা সভাপতি রুহুল আমিন, হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন, সিলেট পশ্চিম জেলা সভাপতি মুহাম্মদ মুজাম্মেল হক, মৌলভীবাজার শহর সেক্রেটারি আশরাফ উদ্দিন শফি, সিলেট পূর্ব জেলা সেক্রেটারি মুজিবুর রহমান খান, খেলাফত মজলিস শাহপরান পশ্চিম থানা শাখা সভাপতি হাফিজ মাওলানা আব্দুল হামিদ, খেলাফত মজলিস শাহপরান পশ্চিম থানা শাখা সহ-সভাপতি মাওলানা শিব্বির আহমদ।
নগরীর সোবহানীঘাট ও উপশহর এলাকার শতাধিক পরিবারের মধ্যে এই খাদ্য সহায়তা প্রদান করে কমিউনিটি পুলিশিং সিলেট মহানগর কমিটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিধান কৃষ্ণ দাস সরকার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম শাহীন, আল আজাদ ও অধ্যাপক ড. হিমাদ্রি শেখর রায়, অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, অ্যাডভোকেট ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, অরুণ বিকাশ চাকমা, রাজু গোয়ালা প্রমুখ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের নতুন অন্তর্ভূক্ত ৩৮নং ওয়ার্ডের টুকেরবাজার, হায়দরপুর এলাকায় বন্যাকবলিত অসহায় দুইশ পরিবারের মাঝে প্রবাসীদের অর্থায়নে ফ্রান্স প্রবাসী মারুফ বিন ওয়াহিদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও মাহবুব বিন ওয়াহিদের ব্যবস্থাপনায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
আমেরিকা প্রবাসী মো. ইব্রাহিম, মো. জাকারিয়া, জয়নাল আবেদীন রানা, ময়নুল আবেদীন হিরা, ইংল্যান্ড প্রবাসী দেলোয়ার হোসেন দিলু, ফ্রান্স প্রবাসী মারুফ বিন ওয়াহিদ, সালেহ আহমদ মাহফুজ, কামরান হোসেন, আজমল হোসেন, কুয়েত প্রবাসী শামসুল আলমের অর্থায়নে এই খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
অপরদিকে কোম্পানীগঞ্জে ত্রাণ নিতে আসা বন্যাদুর্গত মানুষের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির নেতারা। ত্রাণ বিতরণের নামে ফটোসেশন ও মানুষের সাথে প্রতারণা থেকে বিরত থাকা এবং বন্যাদুর্গত মানুষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য তারা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, কোম্পানীগঞ্জে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুধু কোম্পানীগঞ্জ নয়, সিলেট জেলার অধিকাংশ এলাকা বন্যা প্লাবিত। বন্যার্ত মানুষ খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা না দিয়ে উল্টো ত্রাণ নিতে আসা বন্যার্ত মানুষের ওপর পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জের অমানবিক ঘটনায় সিলেটবাসী বিস্মিত হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়- সরকারি দলের মন্ত্রী এমপি ও নেতাকর্মীরা দুর্নীতি লুটপাটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। নিজেদের আখের গুছিয়েছে; কিন্তু বন্যার্ত মানুষের কল্যাণে তারা কোন ভূমিকা পালন করছে না। কিছু জায়গায় নামকাওয়াস্তে ত্রাণ বিতরণের নামে ফটোসেশন করা হচ্ছে। যার সর্বশেষ প্রমাণ কোম্পানীগঞ্জের ঘটনা। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বন্যার্ত অসহায় মানুষের মাঝে লাঠিচার্জে জড়িত কতিপয় অতিউৎসাহী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সিলেটের সব বন্যাকবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
Leave a Reply