আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ: কৃষিমন্ত্রী ডঃ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, আগামী বোরো পর্যন্ত ফসলহারা কৃষকদের সার-বীজ দিয়ে সহায়তা করবে সরকার। কৃষকরা যেন ক্ষুধায় কষ্ট না করেন, এজন্য ভিজিএফ সহায়তা প্রদান করা হবে। ১৬ এপ্রিল শনিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উদ্যোগে সদর উপজেলার লক্ষনশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের বাহাদুরপুর গ্রামে বোরো ধান কর্তন এবং কৃষকের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। পরে শহরের হাছন নগরে বোরো মৌসুমে বিনাধান ১৭ এর ফসল কর্তন ও কৃষক সমাবেশে কৃষিমন্ত্রী ড.মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে আজ খাদ্য ঘাটতি নেই, সংকট নেই, হাহাকার নেই। সুতরাং হাওরের কৃষকরা না খেয়ে থাকবেন না। হাওরের কৃষক আজ প্রকৃতির কাছে অসহায়। তবে ফসলহারা কৃষকের পাশে সরকার সব সময় থাকবে।
এর আগে মন্ত্রী দিরাই উপজেলার বাঁধ ভেঙ্গে বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়া চাপতির হাওর পরিদর্শণ করেছেন। পরিদর্শণ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাঁধগুলোর মেইনটেন্যান্স রক্ষনাবেক্ষণ আশানুরুপ না। বাঁধগুলোর কার্যক্রম যে নিয়মে চলে এগুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। আমরা তাড়াতাড়ি চেষ্টা করবো এই নিয়ম কাুননগুলো আরো কঠিন করে যাতে বাঁধগুলো যথাযথভাবে রক্ষা করা যায়। তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বাঁধের কাজের অনিয়মের তথ্য প্রধানমন্ত্রীকে জানাবো। এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, কেউ যেন না খেয়ে থাকেন সেজন্য ভিজিএফ এবং বিভিন্ন খাদ্য সাহায্য দেওয়া হবে আমি এর নিশ্চয়তা দিচ্ছি। সারাবিশ্বে করোনা মহামারীর কারণে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য সংকট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও যদি ফসল হারিয়ে আমাদের এতবড় ক্ষতি হয় হয় সেটা দেশের খাদ্য শস্যের উপর বিরাট প্রভাব পড়বে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
সভাগুলোতে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি,সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক,সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড.জয়া সেন গুপ্তা, সুনামগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ সুনামগঞ্জ ৪ আসনের এমপি এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সিলেট-সুনামগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট শামীমা আক্তার খানম শামীমা শাহরিয়ার,জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন,যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এডভোকেট হায়দার চৌধুরী লিটন,সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান সিরাজ,দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সুহেল আহমদ, সহ সভাপতি সিরাজ-উদ-দৌল্লা,সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, দিরাই উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রিপা সিনহা প্রমুখ।
পরে মন্ত্রী সদর উপজেলা ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ পরিদর্শন করে হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটার উদ্বোধন করেন।
সুনামগঞ্জে অবস্থানকালে শহরতলীর মাইজবাড়ী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে প্রয়াত সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান এর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও জিয়ারত শেষে পশ্চিমপাড়া ঈদগাহ মাঠে গ্রামবাসীদের সামনে জল জোছনার শহরের প্রিয় মানুষ বাংলাদেশের বরেণ্য সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান কে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হাওরে বোরো ধানের ঝুঁকি কমাতে কাজ চলছে। স্বল্পজীবনকালীন আগামজাতের ধান চাষ, টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও সময়মতো সংস্কারে আন্তঃ মন্ত্রণালয় সমন্বয় বৃদ্ধি এবং ধান পাকার পর তা দ্রুত কাটার জন্য হাওরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত ধান কাটার মেশিন কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার প্রদানে গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে।
হাওরে ১২-১৪ লাখ টন ধান হয়, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ ধান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, কোন কোন বছর আগাম বন্যার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। এ ঝুঁকি কমাতে ১৫-২০ দিন আগে পাকে এমন জাতের ধানচাষে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো জাত উদ্ভাবন করেছেন। এসব জাত চাষে কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে। ব¬াস্ট রোগ হাওয়ায় ব্রি২৮ ও দেরিতে পাকার কারণে ব্রি২৯ ধান হাওরে চাষ না করার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, হাওরের বিস্তির্ণ জমিতে বছরে মাত্র একটি ফসল বোরো ধান হয়। এ ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে, সেজন্য উচ্চফলনশীল জাতের ধান যেমন ব্রিধান ৮৯, ব্রিধান ৯২ এবং বিনাধান-১৭ চাষ করতে হবে। কৃষকদের এসব উন্নত জাতের ধানের বীজ দেয়া হবে এবং এগুলো চাষে তাদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ফসল রক্ষায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও সময়মতো সংস্কারের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সকলে মিলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে। বাঁধগুলো অনেকক্ষেত্রে সময়মতো সংস্কার হয় না। এক্ষেত্রে বাঁধ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে বিদ্যমান নীতিমালার প্রয়োজনে পুনমূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া, পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নদী খননে উদ্যোগ নেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে আছেন। বর্তমান কৃষকবান্ধব সরকার ৭০ভাগ ভর্তুকিতে ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার কৃষকদের দিচ্ছে। ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কৃষিমন্ত্রী হিসেবে আগাম বন্যা বা আকস্মিক ঢলের কারণে হাওরে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে প্রতিবছরই আতঙ্কে থাকি। বৃষ্টি আর নাহলে এ বছরের অবশিষ্ট ধানগুলো কৃষকের ঘরে তোলার বিষয়ে আমরা আশাবাদী। পর্যাপ্ত ধান কাটার যন্ত্র হাওরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, দেশের অন্য অ ল থেকেও যন্ত্র আনা হচ্ছে। বাঁধ রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও রাজনীতিবিদরা কৃষকের পাশে রয়েছেন।’
পরিদর্শনকালে কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, বিএমডিএর পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন সুইট প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে কৃষিমন্ত্রী সদর উপজেলার জাওয়ার হাওরে স্বল্পজীবনকালীন আগামজাত বিনাধান-১৭ এবং উচ্চফলনশীল ব্রিধান ৮৯ কর্তন ও কৃষকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এসময় তিনি ধান কাটার উদ্বোধন করেন ও ধান কাটার যন্ত্র ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার’ কৃষকের মাঝে বিতরণ করেন।
Leave a Reply