যুক্তরাজ্যের পূর্বলন্ডনে “ব্রিকলেন ১৯৭৮, ঘুরে দাঁড়ানোর সময় ”বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে।
৯ জুন বিকালে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিনের ফোরকর্নাস গ্যালারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলো ‘ব্রিকলেন ১৯৭৮, ঘুড়ে দাঁড়ানোর সময়’ নামের চিত্র প্রদর্শনীর।
প্রদর্শনী চলবে ১০ জুন থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এটি সবার জন্য প্রবেশাধিকার ফ্রি থাকবে।
এটি সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে মঙ্গল থেকে শনিবার। আর বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ফোর কর্নাস গ্যালারি ১২১ রমান রোড, বেথনাল গ্রিন, লন্ডন-ই২ ওকিউএন। নিকটবর্তী আন্ডার গ্রাউড স্টেশন বেথনাল গ্রিন-সেন্ট্রাল লাইন।
সেই সময়কার ফটোগ্রাফার পলট্রেভারের ক্যামেরায় ধারণকৃত ৭০টি ঐতিহাসিক ছবি এই প্রদর্শনীতে স্থান পাচ্ছে। ন্যাশনাল লটারি হেরিটেজ ফান্ডের সহযোগিতায় প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ফোর কর্নাস গ্যালারি, স্বাধীনতা ট্রাস্ট ও আলতাব আলী ফাউন্ডেশন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ফটোগ্রাফার পলট্রেভার, স্বাধীনতা ট্রাস্টের জুলি বেগম, আনসার আহমেদ উল্লাহ, আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের পরিচালক নূরুদ্দিন আহমদ ও ফোর কর্নারের আর্টিকস্টিক ডেভেলপমেন্ট পরিচালক কার্লা মিচেল।
ন্যাশনাল ফন্টের মুখপত্র পিস এট ব্রিকলেন মাইগ্রেন্ট সম্প্রদায়কে নিয়ে উসকানি দেয়, বিশেষ করে রোববার সকালে স্কিনহেডরা বাঙালিদের উপর আক্রমণ চালায়। সেই সময়কার বাঙালিরা কেউ একা রাস্তায় বের হতেন না। অতি ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্যবস্তু, যারা উচ্চ বেকারত্ব এবং খারাপ আবাসনের জন্য তাদের ভুলভাবে দোষারোপ করেছিল। ইষ্টএন্ড বিশেষ করে পূর্ব লন্ডন সকল সময়ই মাইগ্রেন্ট কমিউনিটির জন্য চিল উম্মুক্ত। ১৭ শতকের ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা ফরাসি হুগুয়েনটস থেকে শুরু করে ১৯ শতকের আইরিশ দরিদ্র এবং রাশিয়াও পোল্যান্ডে কস্যাক পোগ্রোম থেকে পালিয়ে আসা ইহুদিদের জন্য পূর্বলন্ডন সর্বদাই অভিবাসীদের আশ্রয়স্থল। এটির বর্ণবাদী সহিংসতাএবং প্রতিরোধের সমান দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
ওয়াজওয়াল মজলির নেতৃত্বে ব্রিটিশ ইউনিয়ন অফ ফ্যাসিস্ট ১৯৩৬ সালে ডকের দিকে পূর্বদিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বিখ্যাত ‘কেবল স্ট্রিটের যুদ্ধে’ ইহুদি, আইরিশ ডকার এবং কমিউনিস্টদের দ্বারা বাধা দেওয়া হয়েছিল; যা ভেটল অব ক্যালস্টিট নামে পরিচিত।
১৯৭৮ সালের ৪ মে গার্মেন্টস শ্রমিক আলতাব আলীর হত্যাকাণ্ডের সয়য় স্থানীয় নির্বাচন যেখানে ৪১ জন বর্ণবাদী ন্যাশনাল ফ্রন্ট প্রার্থী দাঁড়িয়েছিল, বাঙালি সম্প্রদায়ের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট চিহ্নিত করেছিল।
যেদিন আলতাব আলী বর্ণবাদীদের হাতে খুন হন। ওই দিন ছিল স্থানীয় নির্বাচন। এ ঘটনার পর বাঙালিসহ সব মাইগ্রেন্ট কমিউনিটির মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়, গড়ে তোলে প্রতিরোধ। ১৪ মে আলতাব আলীর কফিন নিয়ে সাতহাজার মানুষ হাইড পার্ক হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গিয়ে স্মারক লিপি প্রদান করে দশ নং ডাইনিং স্ট্রিটে।
ব্রিটেনে বাঙালিদের আগমন ঘটে আজ থেকে আড়াইশ বছর আগে। কারো কারো মতে তারও আগে। ইতিহাসবিদদের অনেকেই মনে করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে যাবার পর থেকেই বাঙালিসহ ভারতীদের ব্রিটেনে আগমন শুরু হয়। বর্তমানে ব্রিটেনে দশ লক্ষাধিক বাঙালির বসবাস। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রয়েছে বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব, সমগ্র ব্রিটেন থেকে এ বছরও প্রায় চার শতাধিক বাঙালি কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছেন। অফিস আদালতসহ মেইন স্ট্রিমে বাঙালির অবস্থান।
শুধু তাই নয়, ব্রিটেনের বহুজাতিক সমাজে আমাদের ভাষা সংস্কৃতিরও পরিচিতি ঘটেছে। সমগ্র ব্রিটেনে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য শহিদ মিনার। রাস্তায় ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা লেখা শোভা পাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশের পরে রাজধানী লন্ডন শহরকে বলা হয় তৃতীয় বাংলা। আর এটি সম্ভব হয়েছে বাঙালিদের ত্যাগের বিনিময়ে।
Leave a Reply