চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসী যাত্রীরা।
বিমানবন্দরে কর্মরত একশ্রেণির আনসার, সিভিল এভিয়েশন কর্মী, কাস্টমস-ইমিগ্রেশন পুলিশ এ হয়রানির ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তাদের কারণে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে প্রবাসীদের।
সম্প্রতি আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যান রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে প্রতিটি ধাপ পার করতে হয় টাকা দিয়ে।
এর মধ্যে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে বিমানবন্দরের প্রবেশপথে আটকে দেয় আনসার সদস্যরা। সেখানে ৫০ টাকা দিলে ছেড়ে দেয়। অন্যথায় সঙ্গে আসা স্বজনদের নেমে যেতে বলেন। এরপর করোনার আরটিপিসিআর টেস্টের জন্য লাইনে দাঁড়ায়। এক আনসার সদস্য আমার কাছ থেকে ২শ টাকা নিয়ে লাইনে আগে দিয়েছে। সঙ্গে থাকা ব্যাগ বাসা থেকে ভালোভাবেই টেপ দিয়ে বেঁধে নিয়ে গেছি।
সিভিল এভিয়েশনের কার্ডধারী এক ব্যক্তি এসে বলে এ ব্যাগ খুলতে হবে। ব্যাগে মূলত আমার কিছু কাপড় আর বিভিন্ন প্রবাসীদের জন্য স্বজনদের দেওয়া কিছু উপহার আছে। ব্যাগটি স্ক্রেনিংয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে কিছুই মেলেনি। আমি বললাম ব্যাগ খুললে পুনরায় লাগিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমি খুলতে পারব, লাগিয়ে দিতে পারব না। না খোলার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত দেড় হাজার টাকা দিয়ে রক্ষা পাই। গত ৯ জানুয়ারি দুবাইয়ের শারজাহ থেকে দেশে ফেরেন মুন্না নামে এক ব্যক্তি। আসার সময় তার ব্যাগে ছিল দুটি কম্বল ও একটি মোবাইল সেটসহ কিছু কসমেটিক্স। ভেতরে অবৈধ মালামাল আছে এই ভয় দেখিয়ে কাস্টমসের কার্ডধারী এক ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
সরেজমিন সম্প্রতি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে যেসব যাত্রী বের হচ্ছেন তাদের এগিয়ে দেওয়ার নামে সিভিল এভিয়েশন ও কিছু আনসার সদস্য ডলার, দিরহাম কিংবা বিদেশি মুদ্রা দাবি করে। চাহিদামতো বিদেশি টাকা না পেলে রীতিমতো ভর্ৎসনার শিকার হতে হয় প্রবাসীদের। প্রবাসীদের কাছ থেকে ভিখারির মতো টাকা চাওয়ার ঘটনা শাহ আমানত বিমানবন্দরে হচ্ছে প্রকাশ্যে।
আরব-আমিরাত প্রবাসী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি শিবলী আল সাদিক যুগান্তরকে বলেন, ‘রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে প্রবাসীরা। অথচ বিমানবন্দরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি প্রবাসীর ব্যাগ গায়েব, ব্যাগ থেকে মালামাল চুরির ঘটনাও নিত্যদিনের। বিমানবন্দর থেকে বের হলেই ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করে আনসার-সিভিল এভিয়েশন কর্মীরা। মালামাল ট্রলিতে নিয়ে বের করে দেওয়ার কথা বলে বিদেশি মুদ্রা দাবি করে। একটি দেশের পোশাকধারী সংস্থার লোকজন এমন ভিখারির মতো আচরণ করায় বিদেশিদের কাছে আমাদের আত্মমর্যাদাও হানি হচ্ছে।’
পতেঙ্গা থানা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আবুল বশির যুগান্তরকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে আনসার সদস্যরা নিয়ন্ত্রিত হয় মূলত সিভিল এভিয়েশনের অধীনে। বিমানবন্দরে প্রবাসীরা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন এমন তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন খান যুগান্তরকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে কোনো যাত্রী হয়রানির শিকার হচ্ছেন এ ধরনের অভিযোগ আসেনি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে অনেক ক্ষেত্রে হয় কী, কোনো প্রবাসী দেশে আসার সময় বেশি করে সিগারেট নিয়ে আসে। নিয়ম আছে একজন যাত্রী এক কাটুন (২০০ শলাকা) আনতে পারবে। মোবাইল আনতে পারবে একটা। নিজেরটা বাদে। তবে অনেকেই আত্মীয়স্বজনের জন্যও নিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে কাস্টমস শুল্ক দাবি করলে এটিকেও হয়রানি বলে।’
Leave a Reply