পাবনার সুজানগরে ৭ বছরের এক শিশু ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শিশুটির পরিবার ও অভিযুক্ত ব্যক্তিসহ তার পক্ষের লোকজনকে নিয়ে সালিশ করেন গ্রামের মাতবররা।
সালিশে মাতবরদের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি হিসেবে কান ধরে উঠবস করানো এবং জুতার মালা গলায় দিয়ে স্থানীয় গ্রামে ঘোরানো হয়। অথচ প্রচলিত আইনে ধর্ষণচেষ্টার শাস্তি সালিশ বৈঠক ডেকে দেওয়ার বিধান নেই। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হাটখালী ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে।
ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার ও কয়েক প্রতিবেশী জানান, গত শনিবার বিকাল ৪টার দিকে স্থানীয় বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাইভেট পড়ে নিজ বাড়ি যাচ্ছিল শিশুটি। রাস্তার পাশের একটি দোকান থেকে বিস্কুট কিনতে গেলে দোকান মালিক দানেজ শিকদার দানো (৪৮) শিশুটিকে একা পেয়ে দোকানের পেছনেই তার বাড়িতে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।
দানো শিকদার শ্রীপুর গ্রামের মৃত মঙ্গল শিকদারের ছেলে। ঘটনার পরপরই শিশুটি কান্না করতে করতে বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের কাছে বিষয়টি জানালে জখম অবস্থায় শিশুটিকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেন পরিবারের লোকজন। এরপর শিশুটির পরিবার গ্রামের মাতবরদের বিষয়টি জানান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শিশুটির পরিবার দরিদ্র হওয়ায় তাদের আইনের আশ্রয় নিতে নিরুৎসাহিত করেন মাতবররা। গ্রামের সালিশের মাধ্যমে মীমাংসার পরামর্শ দেন তারা। সেই অনুযায়ী ঘটনার দুই দিন পর গত সোমবার রাতে শ্রীপুর বালিকা বিদ্যালয়ে রাত ৮টার সময় সালিশ বৈঠকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কান ধরে উঠবস করানো, তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো এবং অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজ বসতভিটা বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সালিশ বৈঠকের পরদিন মঙ্গলবার শিশু ধর্ষণ চেষ্টাকারী দানো শিকদারকে গলায় জুতার মালা দিয়ে ওই গ্রামে ঘোরানো হয়। সালিশ বৈঠকে হাটখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজাহার আলী শেখ, ইউপি সদস্যসহ ওই গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে শিশুটির পিতা জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফ হোসেন বলেন, সালিশে আমি উপস্থিত ছিলাম কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত দেইনি। গ্রামের মুরব্বিরা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
হাটখালী ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমাকেও সালিশ বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল কিন্তু আমি ওই দিন সন্ধ্যার দিকে এলাকায় গেলেও সালিশ বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম না।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রওশন আলী বুধবার যুগান্তরকে জানান, ধর্ষণচেষ্টার শাস্তি সালিশ বৈঠক ডেকে দেওয়ার বিধান নেই। কোনো নারী কিংবা শিশুকে ধর্ষণ অথবা ধর্ষণচেষ্টা ফৌজদারি অপরাধ। ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা একমাত্র নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়ে বিচার করতে পারবেন। অন্য কোনোভাবেই বিচারের সুযোগ নেই। যারা সালিশ ডেকে শ্লীলতাহানির ঘটনার বিচার করেছেন তারা অন্যায় করেছেন।
পাবনা সহকারী পুলিশ সুপার (সুজানগর সার্কেল) রবিউল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply