স্থানীয় বাসিন্দারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, সানায় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের এক স্টেশনে এই হামলা করা হয়। হামলায় হতাহতের সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ আরব জোটের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে জানায়, সানায় টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ভবনে ড্রোন নিয়ন্ত্রণের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা শনাক্তের পর এই হামলা করা হ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হাউছিরা ইয়েমেনের রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও মন্ত্রণালয় দুশমনিমূলক হামলার কাজে সামরিকভাবে ব্যবহার করছে।’
হামলার আগে কাছাকাছি থাকা বেসামরিক নাগরিকদের স্থান ত্যাগ করার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছিলো বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়।
এতে আরো বলা হয়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের আবহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই স্থান থেকে ড্রোন হামলা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়।
১০ ফেব্রুয়ারির এই ড্রোন হামলার জবাবেই সোমবার সানায় এই বিমান হামলা চালানো হয়। আবহা বিমানবন্দরের এই হামলায় কেউ নিহত না হলেও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছিলেন।
পরে সোমবার হাউছি নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশনে জানানো হয়, আরব জোট টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এই বিমান হামলা চালায়। হামলায় স্থানীয় টেলিকম কোম্পানি টেলিইয়েমেনের ভবন ধ্বংস হয় এবং পাশের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের বিক্ষোভের জেরে ইয়েমেনে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহ সরকারের পতন ঘটে। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দায়িত্ব নেন। নতুন সরকার গঠন হলেও ইয়েমেনের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে।
বিবাদমান পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৪ সালের শেষে ইরান সমর্থিত উত্তর ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করলে প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বের জোট হাউছিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে আগ্রাসন করলে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে আরব উপদ্বীপের দরিদ্রতম দেশটি।
ছয় বছরের বেশি সময় চলমান এই যুদ্ধে হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানাসহ উত্তর ইয়েমেন নিয়ন্ত্রণে রাখে। অপরদিকে সৌদি জোটের সহায়তায় আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দক্ষিণের বন্দরনগরী এডেনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ইয়েমেনে সরকার প্রতিষ্ঠা করেন।
ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ-সংঘাতে এক লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বেসামরিক লোকজন। এছাড়া যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো মানুষ।
ছয় বছরের টানা যুদ্ধ ও অবরোধে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে ইয়েমেন। ইতোমধ্যে ক্ষুধায় ৫০ হাজারের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। ইয়েমেনের চলমান পরিস্থিতিকে বিশ্বের নিকৃষ্টতম মানবসৃষ্ট মানবিক সংকট হিসেবে হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসঙ্ঘ।
সূত্র : আলজাজিরা, আলআরাবিয়া ও আরব নিউজ
Leave a Reply