টস জিতে বল করতে নেমে ১৪৩ রানে ফরচুন বরিশালকে আটকে দিয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তবে ১৪৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে সাত উইকেটের বিনিময়ে ১৩৩ রান তোলে তারা।
ফলে শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচে ইমরুল কায়েসের ভিক্টোরিয়ান্সকে ১০ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সোমবার প্রথম কোয়ালিফায়ার হিসেবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনালে পৌঁছেছে সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশাল।
এর আগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে পাঠান কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেন বরিশালের দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও তরুণ মুনিম শাহরিয়ার। ৬.২ ওভারে উদ্বোধনী জুটিতে দুজনে তোলেন ৫৮ রান। ক্রিস গেইলকে ফিরিয়ে জুটি বিচ্ছিন্ন করেন শহিদুল ইসলাম। ১৯ বলে চারটি চারে ২২ রান করা গেইল ক্যাচ দেন ইমরুল কায়েসের হাতে।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শান্তকে সাথে নিয়ে আগাতে থাকেন মুনিম। দলীয় ৮৪ রানে এই জুটি ভাঙেন তানভির ইসলাম। ৩০ বলে ৪৪ রান করে ফেরেন মুনিম। তার ইনিংসে ছিল দুটি চার ও চারটি ছক্কার মার। একই ওভারে দুর্ভাগ্যজনক রান আউট হন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। টানা পাঁচ ম্যাচে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নেয়া সাকিব এবার ফেরেন ২ বলে ১ রান করে।
পরের ওভারে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্তও। মঈন আলীর বলে অঙ্কনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ১২ বলে শান্ত করেন এক চারে ১৩ রান। ১৩তম ওভারে আবার মঈন ঝলক। এবার ফেরান তৌহিদ হৃদয়কে। ৩ বলে ১ রান করা তৌহিদ ক্যাচ দেন নারিনের হাতে। ১০ রানের ব্যবধানে চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে তখন বরিশাল।
এরপর জিয়া ও ব্রাভোয় ১০০ পার করে বরিশাল। দলীয় ১১০ রানে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন জিয়া। ১২ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৭ রান করেন তিনি। ব্রাভো ও নুরুল হাসান সোহান কাজের কাজ করতে পারেননি। রানের চেয়ে বল খরচ করেছেন বেশি। ১৯তম ওভারে দুজনই আউট হন শহিদুলের বলে। ২১ বলে এক ছক্কায় ১৭ রান করেন ব্রাভো। ১৩ বলে এক চারে ১১ রান করেন নুরুল হাসান।
বল হাতে কুমিল্লার হয়ে ৩ উইকেট নেন শহিদুল। মঈন আলী দুটি, সুনীল নারিনে ও তানভির নেন একটি করে উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে কুমিল্লার দুই ওপেনার কিছুটা ধীর গতিতেই শুরু করেন। প্রথম ১০ ওভার ব্যাট করে তাদের সংগ্রহ হয় ৫৯ রান।
১১তম ওভারের চতুর্থ বলে বরিশালের জন্য প্রথম ব্রেক থ্রু আনেন মেহেদি হাসান রানা। কুমিল্লার স্কোর ৬২ রান থাকার সময় মাহমুদুল হাসান জয়কে বোল্ড করেন তিনি। ৩০ বল খেলে ২০ রান করেন জয়।
এরপরই সাকিব আল হাসানের বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে কুমিল্লাকে চেপে ধরে বরিশাল। ৬২ রানে শূন্য উইকেট থেকে ৬৮ রানে ৩ উইকেটের দলে পরিণত হয় কুমিল্লা। এর মধ্যে দলটির অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ৫ বলে ৫ রানে আর লিটন দাস ৩৫ বলে ৩৮ রান করে ফিরলে চাপে পড়ে কুমিল্লা। শফিকুল ইসলাম এক ওভারেই তুলে নেন লিটন এবং ইমরুলকে।
এরপর মঈন আলীকে সঙ্গে নিয়ে ৩৬ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে ফেরান ফাফ ডু প্লেসিস। তবে মঈন আলী ১৫ বলে ২২ রান করে দলীয় ১০৪ রানে ফিরলে আবারও চাপে পড়ে কুমিল্লা। এদিকে দুর্দান্ত বল করে কুমিল্লার ওপর চাপ বাড়াতে থাকেন বরিশালের বোলাররা। শফিকুল ইসলাম ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। আর সেখান থেকেই ঘুরে যায় ম্যাচের ভাগ্য।
ব্যাট হাতে খুব বেশি কার্যকর না হলেও বল হাতে অভিজ্ঞতার ঝুলি খুলে বসেছিলেন ডুয়েন ব্রাভো। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে তুলে নেন বিধ্বংসী হয়ে ওঠা মঈন আলীর উইকেটটি। এরপর শেষ দিকে মেহেদি হাসান রানা ৩ ওভারে ১৫ রান খরচায় নেন দুটি উইকেট এতেই শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৮ রানের দরকার হয় কুমিল্লার।
সাকিব আল হাসান বল তুলে দেন মুজিব উর রহমানের হাতে। শেষ ওভারে প্রথম বলেই মহিদুল ইসলাম অংকনকে তুলে নেন মুজিব। এরপর সুনীল নারিন একটি ছক্কা হাঁকিয়ে স্বপ্ন জাগালেও এক বল পরেই তাকে তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন মুজিব।
হেরে গেলেও এখনই কুমিল্লার জন্য ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ শেষ হচ্ছে না। প্রথম এলিমিনেটর ম্যাচের জয়ী দল চট্টগ্রামের সঙ্গে বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে জিতলে শুক্রবার বরিশালের সঙ্গে ফাইনাল খেলার সুযোগ পাবে কুমিল্লা।
Leave a Reply