1. smwahidulislam49@gmail.com : S M Wahidul Islam : S M Wahidul Islam
  2. deshbidesherkhabor@gmail.com : deshbidesherkhabor : Desh Bidesher Khabor
  3. moniraakterwahid@gmail.com : Khushi Talukder : Khushi Talukder
  4. chyyahya9@gmail.com : yahya chowdhury : yahya chowdhury
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৫ অপরাহ্ন
নোটিশঃ
আপনাকে "দেশ বিদেশের খবর" নিউজ পোর্টালে স্বাগতম। ডার্নাল শেফিল্ড যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবি ও লেখক এম এ গফফার সম্পাদিত "দেশ বিদেশের খবর" অনলাইন পত্রিকার জন্য সারাদেশে ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যোগাযোগঃ ইউকে- +447871398375, বাংলাদেশঃ
সংবাদ শিরোনামঃ
অধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশ সিলেট বিভাগীয় কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত অধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশ সিলেট বিভাগীয় কমিটি গঠনঃ সভাপতি এস এম ওয়াহিদ, সম্পাদক নাজমুল, সাংগঠনিক তুষার মাতৃভূমি স্মৃতির আড়ালে মা গোয়াইনঘাটে বৃদ্ধ ফেরিয়ালাকে চোরাকারবারি সাজিয়ে মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার ও নির্যাতনের অভিযোগ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তিন শতাধিক মানুষের মাঝে মখলিছুর রহমানের নিজ অর্থায়নে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ সাংবাদিকরা সরকারের উন্নয়নের পাশে থেকে শক্তি যোগায় : বিএমএসএস’র পিঠা উৎসবে নড়াইল পৌর মেয়র সিলেটে গণমানুষের দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকার ৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন দিরাইয়ে কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শিক্ষানুরাগী কুটিমিয়া শাহ আদিল সংবর্ধিত দিরাই প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন সভাপতি সামছুল সম্পাদক লিটন সিলেটে অপপ্রচারকারী কথিত ৮ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক ফয়ছল কাদির এর মামলা দিরাই’য়ে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের শীতবস্ত্র বিতরণ সাংবাদিক কাইয়ূম এর চাচা ইনাতগঞ্জ বাজারের সাবেক সভাপতি মোঃ সিরাজ উদ্দিন এর ইন্তেকাল সায়েস্তাগঞ্জে সরকারী বই বিক্রি, প্রধান শিক্ষিকা আটক নড়াইলে ৩ সাংবাদিকের উপর হামলা ও মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ

‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখীর ঝড়’

  • আপডেট সময়: সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

সালাহউদ্দিন বাবরঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি বিখ্যাত কবিতার নির্বাচিত অংশ উদ্ধৃত করে আজকের কলামের সূচনা করছি, ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখীর ঝড়। তোরা সব জয়ধ্বনি কর! … মধুর হেসে। ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর। তোরা সব জয়ধ্বনি কর!’ এই কবিতার উদ্ধৃত করা চরণগুলো আসলে উদ্ধৃত করেছি আগামী নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) উদ্দেশ করে। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও তার সহযোগী কমিশনাররা তাদের দফতর ভবনের সামনে নতুন কেতন ওড়াবেন আশা করি। বিগত ১২তম সিইসি ও তার পূর্বসূরি একাদশতম সিইসি মিলে দেশের গোটা নির্বাচনব্যবস্থায় কাল-বৈশাখীর ঝড় তুলে সব তছনছ করে দিয়ে গেছেন। দেশের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থার প্রাণ নির্বাচনব্যবস্থাকে কলুষিত করে দিয়েছেন। আমরা নয়া সিইসি ও তার সহযোগীদের দিকে তাকিয়ে আছি তারা দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ের সূচনা থেকেই কমিশনের কার্যক্রমে নতুন অধ্যায় সূচনা করবেন বলে প্রত্যাশা করি। কবি নজরুল লিখেছেন ‘মধুর হেসে। ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর।’ আমাদেরও সেই ভাবনা।

ত্রয়োদশ ইসিতে যারা ক্ষমতায় আসীন হবেন। তারা তাদের উত্তরসূরিদের কাছে যেন মডেল হতে পারেন এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে যেন গৌরব বোধ করতে পারেন। দেশের মানুষ আশা করে তারা তাদের হারিয়ে যাওয়া ভোটাধিকার ফিরে পাবেন। নির্বাচনে সব আলো আঁধারীর খেলার অবসান হয়ে নতুন সূর্যোদয় হবে। ভোটকেন্দ্র আর রাজনৈতিক মাস্তানদের প্রলয়নৃত্যের মঞ্চ হয়ে উঠবে না।

সব যথারীতি একটা সিস্টেমের মধ্যে চলে আসবে। কাজটা অবশ্য কঠিন, গত ৫০ বছরে দেশের কোনো একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিস্টেমে আসতে পারেনি, এর অন্যতম কারণ এমন নয় যে, রাষ্ট্রের কোনো বিধিব্যবস্থা নেই। না তার সব কিছুই বিদ্যমান, সংবিধান ও দেশের আইনি ব্যবস্থায় তার পূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু যারা সেটি অনুসরণ করে দেশকে একটা সঠিক ‘ট্র্যাকে’ তুলে দিয়ে রাষ্ট্রকে গতিশীল করবে তা হয়নি। প্রজাতন্ত্রের রাজনৈতিক নির্বাহী ও সাধারণ নির্বাহী সেই বিধিব্যবস্থা অনুসরণ করেননি। তার ফল আজ যত জঞ্জাল প্রশাসনের পরতে পরতে জমেছে কেউ তা পরিষ্কার করতে উদ্যোগী হয়েছেন এমন কথা বলতে পারব না।

হয় তারা এড়িয়ে গেছেন কিংবা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব নিয়ে সঙ্কট শুরু হয়েছে সেখান থেকে, যেখানে দেশে রাজনৈতিক নির্বাহীদের বাছাই করার যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা কিনা গোটা বিশ্বের সুশৃঙ্খল রাষ্ট্রগুলো অনুসরণ করে। আর তা হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন। প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্র মূলত পরিচালিত হয়ে থাকে রাজনৈতিক নির্বাহীদের দ্বারা আর প্রজাতন্ত্রের নির্বাহীগণ পরিচালিত হবে রাজনৈতিক নির্বাহীর দেয়া দিকনির্দেশনা অনুসারে। আগেই উল্লেখ করেছি, রাজনৈতিক নির্বাহীদের বেছে নেয়ার পথ হচ্ছে নির্বাচন, দেশের যারা মালিক তথা ৫৫ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে যারা বসবাস করেন সেসব নাগরিক। তারা বাছাই করবেন রাজনৈতিক নির্বাহীদের অবাধ, স্বচ্ছ, প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ১৯৭০ সালে যথার্থ অর্থেই দেশের প্রতিটি সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মানুষ জাতিকে তার ঈপ্সিত লক্ষ্য পানে পৌঁছানোর যথার্থ রাজনৈতিক নির্বাহী বেছে নেয় নির্বাচনের মাধ্যমে। আজ কোথায় সে মানের নির্বাচন। নির্বাচন হচ্ছে না তা নয়, দেশে অনুষ্ঠিত অধিকাংশ নির্বাচন এখন সহস্র প্রশ্নে বিদ্ধ হয়ে আছে। এসব তথাকথিত নির্বাচনে যে ব্যক্তি বিজয়ী হন তারা ‘সোনার মানুষ’ নয়, গিল্টি করা সোনার মানুষ। সে কারণের সেই গিল্টি করা মানুষগুলো ক্ষমতা পেয়ে দেশ ও দশের চেয়ে নিজের ভাগ্য নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। এভাবেই আমরা গত ৫০ বছর পার করেছি। কিন্তু এমনটি তো চাননি এ দেশের স্থপতি, তিনি দেশকে যথাযথ পথে চলতে সঠিক ও অনুপম গাইডলাইন তৈরি করে য়ে গেছেন অনন্য এক শাসনতন্ত্রে। সেটি আমরা এক পাশে ফেলে চলছি বলেই যত সঙ্কট সমস্যা এবং অধিকারহারা হয়ে গেছে দেশের মানুষ।

যা হোক, নির্বাচন কমিশনে এখন পালাবদলের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। নতুন কমিশনের গঠন প্রক্রিয়া রাষ্ট্রপতি শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে এটা ঠিক আমাদের সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে কমিশন গঠনের জন্য এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়নি। এ ব্যাপারে দেশের প্রধান রাজনৈতিক নির্বাহীর পরামর্শ নিতে তিনি বাধ্য। সে জন্য কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় ভালো মন্দের ভাগ সবাইকে নিতে হবে। আগে হুদা কমিশনের দায়িত্ব পালন নিয়ে কিছু মানুষ তুষ্ট হলেও দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ তাতে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে আছে। সে কমিশন একটি নিন্দিত কমিশন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আগেই বলেছি, রাষ্ট্রপতির একক ক্ষমতায় ইসি গঠন সম্ভব নয়। সে কারণেই এ ক্ষেত্রে ইসি গঠনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা থেকে যায়। সে জন্য এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি নির্মোহ থাকতে পারেনি।

এ দিকে নতুন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করা নিয়ে অনেক দ্বিধাদ্ব›দ্ব তৈরি হয়েছে, কেননা কিছু সদস্য তো সরকারি কর্মকর্তা। তাদের মতামত কেমন হবে সে প্রশ্ন বোদ্ধাসমাজের রয়েছে। তারা কি শতভাগ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে? কোনো মহলের ‘কান কথা’ উপেক্ষা করতে পারবে কি? অতীতের ইতিহাস তো সে কথা বলে না। ইতোমধ্যে সার্চ কমিটির জনৈক সদস্যকে নিয়ে কথা হচ্ছে। দেশে একটি অন্যতম জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে, তা এখানে তুলে ধরছি। ‘আমার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না’ শীর্ষক সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিতে বিশিষ্ট নাগরিক হিসাবে স্থান পাওয়া মুহাম্মদ ছহুল হুসাইনকে নিয়ে শুরুতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ তিনি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছহুল হোসাইন সমকালকে বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছরের কর্মময় জীবনে যখন যেখানে যে দায়িত্ব পেয়েছেন, শতভাগ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।

কখনো তার কোনো কাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়নি। তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। তিনি বলেন, ‘আমি আমার আদর্শের ওপর আছি। ন্যায়নীতির আদর্শের ওপর আছি। কোনো অবস্থাতেই এই আদর্শ থেকে আমি বিচ্যুত হবো, না।’ তার আদর্শের সাথে সামঞ্জ্যপূর্ণ ছিল বলেই তো উল্লেখিত দলের টিকিটে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। তাই তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক। সার্চ কমিটিতে তাকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয় নিয়ে কর্তৃপক্ষের আগেই ভাবা উচিত ছিল। জাতি এখন নির্বাচন কমিশন গঠন করা নিয়ে সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকতে চায়। সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকা হতো উত্তম। মানুষ নির্বাচন নিয়ে গত ৫০ বছরে বহুবার প্রতারিত হয়েছে।

নতুন কমিশনের নেতাদের মনে রাখা উচিত নেতৃত্ব আসলে ক্ষমতা : নেতাদের শোনা ও পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা, সব স্তরের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আলোচনা শুরু করায় উৎসাহদানের জন্য নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতাকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষমতা, জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে নিজেদের মূল্যবোধ, জনআকাক্সক্ষাকে বোঝা ও দূরদর্শিতাকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা। নেতৃত্ব মানে শুধু নিজস্ব ফোরামে আলোচ্য বিষয়ের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখানো নয়, নিজে সেই আরোধ্য কর্মসূচি স্থির করা, সমস্যা চিহ্নিত করা এবং শুধু পরিবর্তনের সাথে সামাল দিয়ে না চলে নিজেই পরিবর্তনের সূচনা, যা তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নত করা। আজ বড় আশা করে এসেছি কমিশনের নতুন নেতাদের কাছে। সুষ্ঠু স্বচ্ছ নির্বাচন আকাক্সক্ষা নিয়ে জাতি অনেক দৌড়ে, ক্লান্ত জাতি এখন স্বস্তি চায়, আর দুঃস্বপ্ন নয়।

মানুষ দেখবে আজকের সন্ধিক্ষণে, সার্চ কমিটি কী করে। তাদের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। কমিটিকে মনে রাখতে হবে তারা কোনো সাধারণ কমিটি নয়। তাদের আইনি ভিত্তি আছে। সে জন্য নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতিকে যথাযথভাবে এবং সততার সাথে সাহায্য করবেন তারা। সার্চ কমিটি এমন ব্যক্তিদের পক্ষে সুপারিশ পেশ করবে, আশা আছে যাদের বিশুদ্ধতার প্রশ্নে কারো পক্ষেই যেন কোনো সোবা সন্দেহের অবকাশ না থাকে, নিষ্কলুষ সেসব ব্যক্তি যাদের শরীরে রাজনীতির বিন্দুমাত্র কোনো রঙ নেই। সার্চ কমিটির সব সদস্যকে এই মাত্রায় বিবেচনা করতে হবে। আর কথা হচ্ছে শত কেজি দুধের মধ্যে যদি এক ফোঁটা লেবুর রস পড়ে তবে সব দুধই নষ্ট হয়ে যায়। যাদের কমিশনে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হবে, তাদের আবেগতাড়িত না হওয়া, অনুরাগ-বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠতে পারা, নিজ বিবেকের কাছে স্বচ্ছ থাকার, মানুষের মাইন্ড রিডিং করার মানসিকতাসম্পন্ন হতে হবে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দৃঢ়চেতা, সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক চাপ অগ্রাহ্য করতে পারে এমন লোকদের নাম সুপারিশ করা উচিত। কমিটির সুপারিশ ন্যায়ভিত্তিক হবে বলে জাতি আশা পোষণ করে তা বলাই বাহুল্য।

এটাও সত্য ‘রকিব-হুদা’ কমিশনদ্বয়ের জন্য সার্চ কমিটিই সুপারিশ করেছিল। সেসব সার্চ কমিটি সুপারিশ পেশের খানিক পরেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। কিন্তু দশ বছর ধরে দেশকে ক্রমাগতভাবে ডুবতে হয়েছে। তারা জাতির ঘাড়ে এমন দুই কমিশন চাপিয়ে দিয়ে যান, যা তুলনাবিহীন। ইসির নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তাদের অদক্ষতা ছিল। দল বিশেষের প্রতি অপরিসীম অনুরাগের বশবর্তী হয়ে তারা যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেগুলো পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। সব চেয়ে অনুতাপের বিষয় হচ্ছে সিইসি হুদার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা। যে সংস্থার ওপর জাতির সৎ নীতিবান নেতৃত্ব বাছাই করার দায়িত্বভার দিলো, সেই প্রতিষ্ঠানের খোদ প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এলে তা গোটা দেশের জন্য লজ্জার বিষয়। তিনি যদি ‘করাপ্ট’ হন, তবে এমনটাও ভাবার অবকাশ আছে তিনি নির্বাচনে হার জিতের নিয়ে ‘খেল’ দেখাতে সক্ষম হতে পারেন। নিকট অতীতের এসব বিষয় নিয়ে সার্চ কমিটির মনমস্তিষ্কে তা থাকবে বলে আশা করা যায়। এটা সবারই জ্ঞাত নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা এখন একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে।

এ জন্য রকিব ও হুদা কমিশনদ্বয়কে পুরো দায় নিতে হবে। এমন পরিণতি অবশ্যই কারো জন্যই সুখপ্রদ নয়। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন এবং স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। তার কাজে কেউ নাক গলাতে পারেন না। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সরকারের কিছু দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবে বলে সাব্যস্ত হয় তাদের নির্বাচনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক চেষ্টা করার জন্য আগাম ব্রিফিং করে দেয়া উচিত। যারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হবে, তাদের নির্বাচনের পর ভর্ৎসনা করা, শাস্তি দেয়া উচিত। আর নির্বাচনকালে খোদ কমিশনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু গত দশ বছরে দুই ইসির কেউই নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনে যেসব সরকারি কর্মকর্তাগণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তাদের কিছুই করেনি। সরিষায় ভূত থাকলে সে সরিষা দিয়ে ভূত দূর করা যাবে কিভাবে?

হুদা কমিশনের ৫ বছরের ক্ষমতায় থাকার সময় কাল ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যেএই কমিশনের অধীনে জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশনসহ প্রায় পাঁচ হাজারের মতো বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচন নিয়ে সহস্র প্রশ্ন রয়েছে। সে সব নির্বাচন নানা বিশেষণে অভিহিত করা যায় যা কিনা বিশ্বের নির্বাচনী ইতিহাসে অভিনব বলেই ঠেকবে। যেমন ভোটারবিহীন নির্বাচন, নৈশ নির্বাচন, অসংখ্য বিনা প্রতিপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া। এসব আসলে দেশের শোচনীয় গণতান্ত্রিক অবস্থাকে সপ্রমাণ করে, এসব দেশের মানুষের দুঃস্বপ্ন হয়ে আছে। সার কথা, যেসব প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, তাদেরই সমৃদ্ধি এসেছে, কিন্তু গণতন্ত্র হেরে গেছে। তা ছাড়া এসব নির্বাচনে নানা অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। যেসব স্থানে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়। সেই ভোট গ্রহণ নিয়ে হাজারো আপত্তি সত্ত্বেও সব অভিযোগ অগ্রাহ্য করা হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার বহু জনের ভোটদানের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল, কোথাও খোদ ইভিএম যন্ত্র বিকল হয়ে যায়। ভোট দিতে গিয়ে মানুষ নানা সঙ্কটে পড়ে। এসব অব্যবস্থার পরও শক্তিধর প্রার্থীরা বিধিব্যবস্থা লঙ্ঘন করেছে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের অনিয়ম করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে। এসব ঘটনা গণতন্ত্রের প্রাণ নির্বাচনকে অধোগতির শেষ সীমায় নিয়ে গেছে। তা ছাড়া হুদা কমিশনের আমলে নির্বাচন যা কিছু ঘটেছে তার উপসর্গগুলো রাষ্ট্রীয় জীবনে এখনো জের রেখে গেছে। এই কমিশনের পূর্বসূরি কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন, এই দু’কমিশন মিলে ভোট তথা গণতান্ত্রিক চেতনার পথে নেতিবাচক মাইলফলক প্রথিত করে গেছে। এটা সহজেই অনুমেয় দুই কমিশন ধারাবাহিকভাবে বিগত দশ বছরে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে স্বেচ্ছাচার করেছে।

এটা একটা বহু প্রচলিত বাক্য যে, ‘উন্নয়ন ও গণতন্ত্র পরস্পর সমান্তরালভাবে চলে। একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অপরটি সুস্থ থাকার কথা নয়। দেশে গণতন্ত্রে অধোগতির জন্য রাষ্ট্রীয় জীবনে জবাবদিহি নিম্নগামী হয়ে পড়ে। তা উন্নয়নকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে উন্নয়ন ধারা ¯থ হয়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে তখন অপচয়, অর্থ আত্মসাতের ঘটনা, শত জিহ্বা বের করে দেয়। প্রকল্পে নানা দুর্নীতির শত বাহুর বিস্তার ঘটে, প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ক্ষেপণ করে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে নেয়া হয়। দুর্বৃত্তরা এটা ভাবে না যে, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দেয়া করের পয়সা তারা শুষে নিচ্ছে। এসব নিয়ে কথা বলবে কে? প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা যদি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে না পারেন তবে জবাবদিহির কালচার পোক্ত হবে কিভাবে। সব ‘আশার গুড়ে বালি’ ছিটিয়ে গেছে গত দশ বছরে রকিব ও হুদা কমিশন। এখন তারা পার পেয়ে গেছেন মনে করছেন। কিন্তু ইতিহাস নীরবে সব কিছুর সাক্ষী হয়ে থাকছে। একদিন ইতিহাস সমুদ্রের গর্জন নিয়ে জেগে উঠবে, দেবে ধিক্কার। তারা ইতিহাসের পাতায় খলনায়ক প্রতিপন্ন হবে।

হুদা কমিশনের অধীনে বিভিন্ন স্তরের প্রায় পাঁচ হাজারের মতো নির্বাচনে সংঘটিত শত শত অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা দায়ের করেছেন। কিন্তু হুদা কমিশন সেটি অগ্রাহ্য বা কালক্ষেপণ করেছে যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। আইনের এমন ব্যত্যয় ঘটলে শুধু প্রার্থী এককভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তা কিন্তু নয়, তার সমর্থকদের সমর্থন মূল্যহীন হয়ে পড়ে। নির্বাচনে এমন সব অনিয়মের জন্য দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বহু নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে যা প্রকারান্তরে নির্বাচন বয়কট করার শামিল এবং কমিশনের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন। বিএনপির কর্মীরা তো বটেই, দেশের কোটি কোটি মানুষই এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ, হতাশ।

একটি দেশের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে সে দেশের গণতন্ত্রের ব্যারোমিটার হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্র। সে দেশে এমন নিম্নমানের কমিশন কতটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ তা বোদ্ধা সমাজ তো বটেই সাধারণ মানুষের কাছেও বিরাট প্রশ্ন হয়ে আছে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন তথা সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যেসব বিদেশী পর্যবেক্ষক এসেছিলেন, তারা নির্বাচনের নামে ‘মকারি’ দেখে গেছেন। তার ভিত্তিতে তারা যে প্রতিবেদন তৈরি করেন তাতে দেশের নির্বাচনকে ধোঁকাবাজি হিসেবে গণ্য করেছেন। সে ক্ষেত্রে কমিশনের আত্মমর্যাদার কতটুকু কী হয়েছে তা তারা অনুভব করবেন কি না জানি না। তবে দেশের যে ক্ষতিটুকু ক্ষতি হয়েছে সেটি কিন্তু গোটা দেশবাসীর আত্মসম্মানে প্রচণ্ড আঘাত করেছে। এমনিতে এ দেশ বহির্বিশ্বে দুর্যোগের জনপদ হিসেবে করুণার পাত্র। দুর্যোগ নিয়ে দেশের মানুষের ও প্রশাসনের তেমন কিছু করার থাকে না। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কাল-বৈশাখীর যে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে তা তো আমাদের ‘হাতের কামাই’। এটা অস্বীকার করার ‘অসিলা’ কোথায়?

ইসিকে এখন যে হালে রেখে যাচ্ছে দ্বাদশ কমিশন, তাকে টেনে তোলা, তার ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার খুব সহজ কাজ নয়। প্রথমত ইসির যে সাংবিধানিক মর্যাদা তা স্বস্থানে নিয়ে আসা। ইসি ও নির্বাচন নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে যে হতাশা ও ক্ষোভ তা দূর করতে হবে নতুন তথা ত্রয়োদশতম ইসিকে। নতুন ইসিকে নির্বাচন নিয়ে যে ফ্রিস্টাইল অনুশীলন হয়েছে, সে মানসিকতা দূর করার জন্য দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে। সংবিধান বলেছে, ইসি দায়িত্ব পালনে স্বাধীন, ‘কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।’ তারা তো এমন শপথবাক্য পাঠ করে দায়িত্বে আসবে ‘আমি সংবিধান রক্ষণ সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করিব; এবং আমার সরকারি কার্য ও সরকারি সিদ্ধান্তকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দিব না।’ মূল কথা হচ্ছে সিইসি এবং অন্যান্য কমিশনারের দায়িত্ব হবে কমিশনে ইমেজ উচ্চকিত করা। সুষ্ঠু স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সব মহলের দাবি পূর্ণ করা। সে দিক থেকে বিবেচনা করলে, নতুন ইসিকে জনগণের মনের ক্ষোভ দুঃখ বুঝতে স্বযত্মে মানুষের ‘মাইন্ড রিড’ করতে হবে। দেশটার মালিক কিন্তু ৫৫ হাজার বর্গমাইলের এই জনপদে বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিক। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উপর থেকে নিচে নয়, বরং নিচ থেকে উপরের কথা শুনতে হবে। আর এভাবেই নতুন ইসিকে ভাবতে হবে।

ভোট গ্রহণের জন্য ইভিএম নিয়ে জবরদস্তি করেছে হুদা কমিশন। অবশ্যই প্রযুক্তির ব্যবহারকে স্বাগত জানাতে হবে, কিন্তু এখনো তো বহু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই ¯øথ গতিতে চলছে। সাধারণ মানুষের ঘাড়ে কেন এখনই ইভিএম চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন তা একটা প্রশ্ন। এই প্রযুক্তি গ্রহণের লেভেলে কি আমাদের গ্রামগঞ্জের মানুষ এমনকি শহরে বসবাসকারী অসংখ্যক মানুষ রয়েছে? ইভিএম মাধ্যমে কারো সাহায্য ছাড়া ভোট প্রদান করতে পারবেন কতজন? ভোট দিতে কারো সাহায্য নেয়ার অর্থ হচ্ছে ভোটের গোপনীয়তা নষ্ট হয়ে যাওয়া। তা ছাড়া প্রযুক্তি নিয়ে একজন ভোটারের বুঝ বিবেচনার ঘাটতি থাকলে, তার সাহায্যকারী মতলববাজি করলে কোথাকার ভোট কোথায় যাবে সেটি কেউ টের পাবে না।

নিশ্চয়ই অনেকের স্মরণে আছে কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অনেক রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে সেই কমিশন নতুন ধরনের ইভিএম চালু করেছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে প্রথমবারের মতো ইভিএম চালু করেছিল সেই কমিশন। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।

ইভিএমের ভালো দিকের চেয়ে মন্দ দিকের মাত্রা অনেক বেশি। এটা আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া হলেও ইভিএম নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে : যেমন অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের দ্বারা কেন্দ্র দখলের ঘটনার পর পুলিং এজেন্টদের নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক সংখ্যক ভোটের মালিক হতে পারে প্রভাবশালী মহল ইভিএমের ক‚টকৌশলে। বরাবরই এমন অভিযোগ শোনা যায় যে, নির্বাচন কমিশনে দলীয় লোক ঢুকে পড়ে। এমনটা ঘটলে তাদের কেউ যদি প্রতি কেন্দ্রে অন্তত একটি করে মেশিনে এ প্রোগ্রাম করে দেন যে, নির্বাচন শেষে ক্লোজ বাটনে ক্লিক করলেই যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট কোনো প্রতীকে অতিরিক্ত বিশ বা ত্রিশ ভোট যুক্ত হবে। তাহলে সহজেই নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়া সম্ভব। উপরে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় মাইক্রোকন্ট্রোলারের পরিবর্তনের সুযোগ হলে কোনো কেন্দ্রের সব প্রার্থী একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট পাওয়ার পর যেকোনো ব্যালট বাটনে চাপলেই অতিরিক্ত ভোটকেন্দ্র দখলকারী প্রার্থীর প্রতীকে যুক্ত হবে। এমন প্রোগ্রামও লিখে ব্যালট ছিনতাই সম্ভব, যদি নির্বাচনী কর্মকর্তার স্মাট কার্ডে নকল কার্ড তৈরি করা হয় এবং তা যদি ইভিএম-এর প্রোগ্রাম করে একবারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট কাস্ট করে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হয় তাহলে তা নির্বাচনের ফলাফল পুরোপুরি পাল্টে দেবে। একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের ‘সুনাম’ রয়েছে। তাই গোপনে যে ইভিএমে কারসাজি করা হবে না এমন নিশ্চয়তা অন্তত বাংলাদেশে দেয়া যায় না।

ইভিএমের প্রতিটি ইউনিট চালু অবস্থায় পৃথক করা যায়। প্রভাবশালীদের দ্বারা কেন্দ্র দখলের পর গোপনে সরবরাহকৃত অগ্রিম ভোট দেয়া ইভিএমের শুধু কন্ট্রোল ইউনিটে করলেই চলবে। ফলাফল শতভাগ অনুকূলে যাবে। মাইক্রোকন্ট্রোলার চিপ নিয়ন্ত্রণ করে ইভিএমের প্রতিটি স্মার্টকার্ডে ব্যবহৃত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে কয়েক মিটার দূরে থেকেও কন্ট্রোল ইউনিট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

যে অভিযোগগুলো তুলে ধরা হলো, তার সবই বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাই ইভিএম নিয়ে নতুন কমিশনের ভেবে দেখা উচিত হবে।

নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সরকারি কর্মকর্তারাস্বেচ্ছায় বা চাপের মুখে কোনো অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে প্রভাবশালী প্রার্থীকে বিজয়ী করার ব্যাপারে কাজ করতে পারে।

বিশেষ ব্যক্তি বা দলের প্রার্থীদের অনুকূলে প্রভাব বিস্তার, অনুরাগ বিরাগ প্রদর্শন করে কেউ নির্বাচনের বিশুদ্ধতা বিনষ্ট করলে কমিশন তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার পূর্ণ অধিকার রাখে। কমিশনের প্রথম বৈঠকেই সব বিষয় পূর্বাপর বিশ্লেষণ করা উচিত বলে মনে করি।
এসব বিষয়ও ভবিষ্যতে খতিয়ে দেখতে হবে। কেননা সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত রয়েছে, ‘এই ভাগের অধীন নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেরূপ কর্মচারী প্রয়োজন হইবে, নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেরূপ কর্মচারী প্রদানে ব্যবস্থা করিবেন।’

অর্থাৎ নির্বাচন চলাকালে প্রজাতন্ত্রের সেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি কমিশনের আওতাধীন হয়ে যাবে। তাই তাদের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে যদি তারা দায়িত্ব পালন নিয়ে অনিয়ম অবহেলা শৈথিল্য দেখান তবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের গবেষক ও বোদ্ধাসমাজের পর্যবেক্ষণের আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে ইভিএম নিয়ে সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কেও আমাদের জানার কৌতূহল রয়েছে। ভারত বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ তার আছে শক্ত মেরুদণ্ডসম্পন্ন নির্বাচন কমিশন। সেখানেও ইভিএম নিয়ে নানা অভিযোগ। নিকট অতীতে বহুজন সমাজ পার্টি প্রধান মায়াবতী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, দিল্লির কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন অভিযোগ করছেন ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনে কারচুপি সম্ভব। উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের পর সংবাদ সম্মেলনে করে মায়াবতী অভিযোগ করে বলেন, ‘ইভিএম যন্ত্রগুলোতে বড় ধরনের কারচুপি করা হয়েছে, যার ফলে শুধু বিজিপির দিকে ভোট চলে গেছে। ভারতে এখন কংগ্রেসসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দাবি জানাচ্ছে, ইভিএমের আর দরকার নেই। ভারতে আবার কাগজের ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নেয়া হোক। পশ্চিমে জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। আর আমরা কোনো রকম দীর্ঘমেয়াদি পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই জাতীয় নির্বাচনে মতো সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করছি। এখানে প্রযুক্তি ব্যবহারের সমক্ষতার প্রশ্নসহ অনেক আশঙ্কা; কিন্তু যদির বিষয় আছে।

দেশের মানুষ কেমন নির্বাচন চায় বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে সে বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। নতুন ইসির যদি আরো ভালো কিছু করার ভাবনা থাকে জনগণ অবশ্যই তাকে স্বাগত জানাবে। কথা শেষ করার আগে এতটুকু যোগ করতে চাই, দেশের শাসনতন্ত্রে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ইসি নিয়ে যে ধারণা চেতনা উচ্চকিত করা হয়েছে আপনারা সেটি নিশ্চয়ই আত্মস্থ করবেন। তবেই সেই ‘হোলি বুকে’র সৌরভে সৌন্দর্যে সব কিছু মাধুর্যমণ্ডিত হয়ে একটি অনাবিল পরিবেশ সমাজে সৃষ্টি করবে। আমরা তার অপেক্ষায় বুক বেঁধে রইলাম।
ndigantababor@gmail.com

ছবি ও লেখ: নয়া দিগন্ত

 

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরও খবর
© All rights reserved © 2022 deshbidesherkhabor.com
Customized By Outsourcing Sylhet